মঙ্গলবার , ৮ আগস্ট ২০২৩ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আরো
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্টগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. ঢাকা
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. ফ্যাশন
  12. বরিশাল
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. ময়মনসিংহ

ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি-১: আবীর আহাদ

প্রতিবেদক
আপডেট পোস্ট ২৪ ডেস্ক;
আগস্ট ৮, ২০২৩ ৪:৫৫ অপরাহ্ণ

স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধু : দেশী-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র

।। এক ।।
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’

এই ঐতিহাসিক বজ্রঘোষণার মহানায়ক, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্তিলাভ করে বিজয়ী বীরের বেশে তাঁর আজীবন সাধনার স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিবাহিনীর মহাবিভীষিকাময় রক্তাক্ত গণহত্যার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ঐ রাত ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। রেডিও ও ওয়্যারলেসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের সর্বত্র ছাত্র শ্রমিক কৃষক যুবক আনসার পুলিশ ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে পাকিহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবলবিক্রমে স্বাধীনতা রক্ষার মহাসমরের ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকাস্থ পাকিবাহিনীর রেডিও ও ওয়্যারলেসে ধরা পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর পূর্বনির্দেশ মোতাবেক সত্তরের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি ও উদ্দীপ্ত যুবকরা পাকিস্তানকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও সংঘটিত করার জন্য প্রতিবেশী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে থাকেন। মানবতার খাতিরে ভারত তাদের সীমান্ত খুলে দেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে দেয়। পুরো ৯ মাসব্যাপী পাকিবাহিনীর মহাবিভীষিকাময় গণহত্যায় ত্রিশলক্ষ মানুষ প্রাণ বিসর্জন দেয় এবং এক কোটি পনেরো লক্ষ মানুষ প্রাণরক্ষার জন্য ভারতের মাটিতে আশ্রয় গ্রহণ করে।

১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় গণপরিষদের সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে তাঁর অনুপস্থিততে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৭ এপ্রিল খোন্দকার মোশতাক, এএইচএম কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে মন্ত্রিসভার সদস্য ও কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি করে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার সুবিশাল আম্রকাননকে ‘মুজিবনগর’ ঘোষণা করে দু’শতাধিক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক ও বিপুলসংখ্যক স্বাধীনতাকামী মানুষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিপ্লবী সরকার আত্মপ্রকাশ করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব দু’টি যুধ্যমান শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাত্মক সমর্থন দান করে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ ও বিশ্বজনমত। অপরদিকে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণচীন, সৌদি আরবসহ অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র ও পুঁজিবাদী বিশ্ব। অবশেষে দীর্ঘ ন’মাসব্যাপী সর্বাত্মক যুদ্ধে মুজিবনগরে বিপ্লবী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথকমাণ্ডের কাছে পাকিবাহিনী উনিশশো একাত্তরের ষোলো ডিসেম্বর নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করে। ত্রিশ লক্ষ বাঙালি ও প্রায় বিশেষ হাজার ভারতীয়র জীবনদানের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। মুজিবনগর সরকার তথা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু তখনো পাকিস্তানের হাতে বন্দী।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রণহুঙ্কার, ভারত-সোভিয়েত ও বিশ্বজনমতের প্রচণ্ড চাপের কাছে নতিস্বীকার করে পাকিস্তান সরকার বাহাত্তর সালের আট জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিয়ে লণ্ডন পাঠিয়ে দেয়। লণ্ডন থেকে দিল্লি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দশ জানুয়ারি তাঁর চির ভালোবাসার ধন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার পূর্ণতা লাভ করে।
এক্ষণে আমরা ইতিহাসের একটু পেছন পর্যালোচনা করে আসি। উনিশশ সাতচল্লিশ সালে পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে এদেশটি বৃটিশের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও সুদীর্ঘ তেইশ বছরের পাকিস্তানি শাসনে মূলত: এ-ভূখণ্ড পশ্চিম পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। পাকিস্তানি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও বল্গাহীন শোষণে নিষ্পেষিত বাঙালি জাতি তাই নতুন কর প্রকৃত স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। আর এ-জাতির স্বপ্নের স্বাপ্নিক প্রতিবিম্ব হিশেবে আবির্ভূত হন শেখ মুজিবুর রহমান নামের অমিততেজ এক উদীয়মান সূর্য যিনি ছিলেন উপমহাদেশের সবচে’ মেধাবী ও যুক্তিবাদী রাজনীতিক, প্রখ্যাত আইনজীবী, অবিভক্ত বাংলা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিজহাতে-গড়া ও তাঁরই গুণমুগ্ধ ভাবশিষ্য।

পাকিস্তানের শাসক ও শোষকগোষ্ঠী পূর্ববাংলাকে চির পদানত করার লক্ষ্যে প্রথমেই আঘাত হানে বাংলা ভাষার ওপর। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানি উর্দু ভাষার মধ্যে বিলীন করে এদেশের মাটি ও মানুষকে তাদের শাসন ও শোষণের লীলাক্ষেত্রে পরিণত করার চক্রান্তের বীজ বপন করা হয় পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথেই। উনিশশো আটচল্লিশ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে সদম্ভে ঘোষণা করেন : Urdu & only Urdu shall be the state language of Pakistani !

প্রবল প্রতাপশালী জিন্নাহ সাহেবের মুখের ওপর ঢাকার ছাত্রসমাজ No no বলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জানায় । আর এ-প্রতিবাদ প্রতিবাদ বিক্ষোভের প্রতীক হিশেবে বেরিয়ে আসেন তরুণ শেখ মুজিব । মুজিব সেসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ’র আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন । সেই থেকে শুরু । আটচল্লিশ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবির আন্দোলনে নেতৃত্বপ্রদানের অপরাধে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় । এভাবে তার লেখাপড়ারও অবসান ঘটে । উনিশশো উনপঞ্চাশ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পৃষ্ঠপোষকতা ও নির্দেশে, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ । শেখ মুজিব এদলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন । বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের তিনি অন্যতম প্রধান প্রবক্তা হিশেবে আবির্ভূত হন । পরবর্তীকালে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ অত:পর তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হন ।

চলবে—–

লেখক : আবীর আহাদ,
(বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বহু গ্রন্থের লেখক)
চেয়ারম্যান
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

 

সর্বশেষ - নিজস্ব প্রতিবেদক