সোমবার , ৩১ জুলাই ২০২৩ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আরো
  5. খুলনা
  6. খেলাধুলা
  7. চট্টগ্রাম
  8. জাতীয়
  9. ঢাকা
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. ফ্যাশন
  12. বরিশাল
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. ময়মনসিংহ

ধোপড়া ক্যাম্প: ১৯৭১: আবীর আহাদ

প্রতিবেদক
আপডেট পোস্ট ২৪ ডেস্ক;
জুলাই ৩১, ২০২৩ ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

৩১ জুলাই, ১৯৭১। আমার জীবনে এক অনন্য দিন। ঐতিহাসিকও বটে। এ দিনেই ভারত থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী গ্রুপ সমেত  দেশে আসি। কাশিয়ানী-মুকসুদপুর উপজেলা সীমান্তের কাশিয়ানী অংশে ধোপড়া নামক স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করি।

উল্লেখ্য যে, আমরা ভারতের বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পুর্ব সিংভূম জেলার চাকুলিয়া সামরিক ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা ও সম্মুখ সমরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।। আমাদের উইং নং ছিলো ৬। ব্যাস নং ২। উইং কমান্ডার ছিলেন একজন রাজপুত। লে: বি বি বায়েল। প্রশিক্ষকের ছিলেন সুবেদার মেজর বলবীর সিং, সুবেদার মহেন্দ্র সিং, হাবিলদার রবীন্দ্র মঙ্গলম, হাবিলদার গোপাল। সমগ্র চাকুলিয়াতে ১০টি উইং এ একযোগে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। তখন ঐ চাকুলিয়ার সার্বিক কমান্ডার ছিলেন একজন বাঙালি ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা। লে: কর্নেল পি কে দাশগুপ্ত। তাঁর আদি বাড়ি ছিলো আমাদের সাতক্ষীরা।

জুলাই মাসের ২১ তারিখে আমাদেরকে আমাদের নির্ধারিত ৯ নং সেক্টরে মেজর জলিলের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিলো পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগণার বসিরহাট মহকুমার টাকী থানার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীর পশ্চিম পাড়ে বেগুনদিয়া গ্রামে। সেখানের একটা প্রাইমারি স্কুলে। এটাই ছিলো ৯ নং সেক্টরের ইণ্ডাকশন ক্যাম্প। এখানে অবস্থান করতেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন সুলতানা উদ্দিন আহমেদ ও ক্যাপ্টেন এ জি খুরশিদ। সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল বসতেন টাকীতে।

সেক্টরে তখন অস্ত্রশস্ত্রের বেশ অভাব। তবে বঙ্গবন্ধুর ছোটভাই শেখ আবু নাসের ভাইয়ের সহযোগিতায় আমরা কাশিয়ানী, আলফাডাঙ্গা ও বরিশালের ৩টি গ্রুপ প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সমেত বৃষ্টিমুখর ২৭ জুলাই বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। নিজ এলাকায় ফেরার পথিমধ্যে মাগুরা জেলার আড়পাড়া ব্রিজে পাকি-রাজাকার বাহিনীর সাথে আমাদের মৃদু সংঘর্ষ বাধে। আমরা সাফল্যের সাথে পথ অতিক্রম করে চলে আসি। এভাবে নানান আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ভাটিয়াপাড়া পাকিঘাঁটি এড়িয়ে ৩১জুলাই রাত ৩টায় এসে পড়ি আমার নিজগ্রাম পারুলিয়া।

তখন তুমুল বর্ষাকাল। প্রতিটি বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। গ্রামটিতে ঘনবসতি। ভাটিয়াপাড়া থেকে মাত্র ৫ মাইল দূরে। চরম আওয়ামী লীগ প্রভাবিত এলাকা। অপরদিকে আমার ব্যক্তিগত সাবেক তৎপরতাসহ মুক্তিবাহিনী নিয়ে এসেছি, এ খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিবাহিনী গ্রামের ওপর আকাশ থেকে বোমা মারতে পারে এসব বিবেচনা করে আমার বাবা পরামর্শ দিলেন যেন ক্যাম্প কোনো পরিত্যক্ত স্থানে প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বেশকিছু অর্থও দিলেন। বাবার পরামর্শ অনুযায়ী ঐ রাতেই চলে যাই আমাদের গ্রাম থেকে ৩ মাইল দূরে সাতাশিয়া গ্রামে। ভোরবেলা আওয়ামী লীগ নেতা, আমাদের এক ভগ্নিপতি টিপু মিয়ার বাড়িতে নৌকো ভেড়াই। সেখানেও বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেক কষ্টে জানু আপা আমাদের ২৫জন লোকের খাবারের ব্যবস্থা করলেন। পরিতৃপ্তি সহকারে ভাত ও হাঁসের মাংস খেয়ে আমরা নৌকো ও বাড়ির মাচায় লম্বা ঘুম যাই। বিকেলবেলা দুলাভাই টিপু মিয়া আমাদের নিয়ে গেলেন পাশের হিন্দু অধ্যুষিত ধোপড়া গ্রামে। এ গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু ভারতে চলে গেছেন। গ্রামটিও একটু উঁচু এলাকা। এ গ্রামের ফুটবল খেলার মাঠের সাথে লাগোয়া রমেশের পরিত্যক্ত বাড়িতে আমরা সদলবলে উঠে গেলাম। এলাকাটার চারপাশে প্রশস্ত বিল। পানি থৈ থৈ করে। ফলে এটা নিরাপদ ঘাঁটি বলে আমাদের কাছে মনে হলো। এ ধোপড়া হলো আমাদের প্রথম ক্যাম্প।

মুক্তিযুদ্ধে আমার কমাণ্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা :
সি-ইন-সি স্পেশাল (ভারত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) গ্রুপ কমান্ড,
থানা/উপজেলা : কাশিয়ানী
মহকুমা : গোপালগঞ্জ,
জেলা : ফরিদপুর
৯নং সেক্টর (পরবর্তীতে ৮ নং সেক্টর)।
কমাণ্ডার: আবীর আহাদ (পারুলিয়া)
ডেপুটি কমাণ্ডার : হাবিলদার আবদুস সোবহান, মৃত, (ডোমরাকান্দী)
সদস্য : পুলিশ কনস্টেবল আবদুল মালেক, মৃত, (হরিদাশপুর)
সদস্য : মো: শাহাবুদ্দিন আলম জনু, (পোনা), ৩১ অক্টোবর ফুকরা রণাঙ্গনে শহীদ
মো: কাওসার নাসিম (পোনা)
মো:আবদুর রাজ্জাক (খয়েরহাট)
মো:আকমল হোসেন (গোয়ালগ্রাম)
মো: কাবুল হোসেন (গোয়ালগ্রাম)
মো: হাসমত আলী (তারাইল)
মো: সিরাজুল ইসলাম (সাধুহাটি)
মো: জিন্নাহ (গেড়াখোলা)
মো: আবদুল খালেক (রাজৈর, মাদারীপুর)
মো: ফরিদ আহমদ (ফুকরা)
মো: রবিউল ইসলাম, (ফুকরা), ৩১ অক্টোবর ফুকরা রণাঙ্গনে শহীদ
মো: বাদশা মিয়া (ফুকরা)
মো: সুলতান আহমদ (ফুকরা)
মো: সাহেব আলী (ফুকরা)
মো: আবুল কাশেম (নাওরা ভাদুলিয়া)
বাদশাহ মিয়া, মৃত, (সাহেবের চর)

বি:দ্র : আরো দু’জন বীরযোদ্ধার নাম স্মরণে আসছে না। তবে জীবিত সহযোদ্ধাদের সে-দু’জনের খোঁজ নিতে বলেছি।

এসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কখনো আমরা এককভাবে, কখনো ৯ সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নূর মোহাম্মদ বাবুলের কমান্ডে ও কখনো বৃহত্তর ফরিদপুর মুজিববাহিনীর ফিল্ড কমাণ্ডার শাহ মোঃ আবু জাফরের সঙ্গে (গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর)  ভাটিয়াপাড়া, ফুকরা, বড়ফা, জলিরপাড়, কামারগ্রাম,  বোয়ালমারী প্রভৃতি রণাঙ্গনে কখনো গেরিলা পদ্ধতিতে, কখনো সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছি। বিশেষ করে ভাটিয়াপাড়া পাকিঘাঁটিতে কমপক্ষে বিশবার বড়ো ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করেছি। ৩১ অক্টোবর ঐতিহাসিক ফুকরা রণাঙ্গনে আমার গ্রুপের দু’জন বীরযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমদ জনু ও রবিউল ইসলাম পাকিবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে বীরত্বের সাথে লড়াই করার মধ্যে শহীদ হন। আমি নিজেও আহত হই।

বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আমার অধিনায়কত্বে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটি প্রকাশ করা হলো। আমি চাই, দেশের জীবিত সব মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ কমান্ডার/গ্রুপের জীবিতরা তাদের স্ব-স্ব গ্রুপের বা বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা স্ব-উদ্যোগে জাতির সামনে প্রকাশ করবেন।

লেখক: আবীর আহাদ
চেয়ারম্যান,
একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ

সর্বশেষ - নিজস্ব প্রতিবেদক